মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

দ্য ইনোসেন্স অব মুসলিমস: যায়নাবাদী অর্থে খৃষ্টীয় ক্রুসেড



ম্যান  প্লাস এক্স ইকুয়েলটু ইসলামীক টেরোরিস্ট
ইসলামীক টেরোরিস্ট মাইনাস এক্স ইকুয়েলটু ম্যান
ইসলাম, মুসলমান ও  মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা. কে বিদ্রুপ করে  নির্মিত  ‘দ্য ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ চলচ্চিত্রের একটি সংলাপ।  ৫০ জন আর্টিস্ট এর  শ্যুটিং  করা এই ছবিটি গত বছর  লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি গির্জার ভেতরে  ধারণ করা হলেও  তেমন করে নজরে আসেনি কারো। সম্প্রতি এই ছবিটির  ট্রেলার  ইউটিউবে ছেড়ে দেয়ার পর কিছুটা নড়েচড়ে উঠেছে বিবেক। মানবতার নবীকে  অমানবিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে  এই ছবিতে। বিক্ষোভে ফুসে উঠেছে দেড়শ কোটি মানুষ। লিবিয়া, মিশর, জর্ডান, তিউনিশিয়া,  ইরান, মরক্বো, সুদান, ফিলিস্তিন, রাস্তায় নেমে এসেছে মুসলমান। ক্ষোভ বেরুচ্ছে মুসলমানের কলিজা থেকে। বিক্ষোব্ধ জনতার ক্ষোভের আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। কায়রো এবং সানায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা চালিয়ে দূতাবাস তছনছ করে দিয়েছে বিক্ষোভ কারীরা। তিউনিসে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে  জনতা। উত্তেজিত জনতার হামলায় বেনগাজিতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ আরো চারজন কর্মকর্তা। অবশ্য লিবিয়ার এই হত্যাকাণ্ডের সাথে  মুসলমানরা জড়িত কিনা- খোদ যুক্তরাষ্ট্রু থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বলা হচ্ছে বেনগাজির হামলার সঙ্গে ইসলামবিরোধী ওই ছবির কোন যোগসূত্র না-ও থাকতে পারে। এ হামলা চালানোর জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। সুযোগসন্ধানীরা এখন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতির এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। 

অবশ্য ওবামা বলেছেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেই ছাড়বেন। বাপকা বেটা, সিপাহীকা ঘোড়ার মতোই কথা। তিনি তার বাহনীর প্রতি হুকুম-আহকাম যা নাজিল করার, করে ফেলেছেন। ইতোমধ্যেই  লিবিয়ার উদ্দেশে  যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন বিমান, ডেস্ট্রয়ার ( ছোট ও দ্রুতগামী রণতরী) ও  ৫০/১০০ সদস্যের  মেরিন কোরের একটি বিশেষ ইউনিটকে পাঠিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। এগুলোর ভূমিকা সেখানে কী হবে তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে আন্দাজ করা যাচ্ছে। মতলব খারাপ।

 লিবিয়ার এই ঘটনা যদি তৃতীয়  কোনো পরে দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে, যেমনটি ভাবছে ওয়াশিংটন, তাহলে  আমাদের কিছু বলার নেই। আর যদি এটাকে  মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমনের ইস্যু বানানোর পায়তারা করা হয়, ঠিক যেমনটি করা হয়ে আসছে, তাহলে ওবামা প্রশাসনকে একটি দু:সংবাদ দিই, বিশ্বে এখন দেড়শো কোটি মুসলমান। এরা পরষ্পর থেকে দূরে থাকছে, সবসময়ই দূরে থাকবে-কে বলেছে? মুসলমানদের আপোষের মধ্যে বিবাধ লাগিয়ে রেখে ফায়দা হাসিল করছেন, আপনাদের এই দুরভিসন্ধি মুসলমানরা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে। সেই দিন আরে বেশি দূরে নয় যেদিন মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে জেগে উঠবে। সেদিন আর পালাবার রাস্তা খোঁজে পাওয়া যাবে না।

 যুক্তরাষ্ট্রেকে ভুলে গেলে ভুল হবে শরীরের শক্তি সবসময় সমান থাকে না। বয়সের ভারে একসময় নূয়ে পড়তে হয়। অথবা অনিয়ন্ত্রিত চালচলনে বয়সের আগেই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ডাক্তারদের বলতে শুনেছি ৮০% অসুস্থতার মূলেই নাকি  খাবারের অনিয়ম বা ভেজাল ও তৈলাক্ত খাবার। এই জীবনে অখাদ্য-কুখাদ্য’র  তো আর কম খাননি। গরিবের ভিটে খেয়েছেন, কমজুরের মাটি খেয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেল খেয়েছেন, ল নারীর ইজ্জত খেয়েছেন, মুসলমানের রক্ত খেয়েছেন, সবচে’ জঘন্যভাবে বিবেকের মাথা খেয়েছেন, কীভাবে ভাবেন আরো দির্ঘদিন সুস্থ শরীরে আরামসে দিন কাটাবেন?

 ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। পূর্বসুরি রাশিয়ার দিকে তাকান। গুনে দেখুন ক’টুকরো হয়েছে। আপনাদের অবস্থা যে আরো করুণ হবে না, সেই গ্যারাণ্টি তো  কেউ দিতে পারবে না। পরাশক্তি রাশিয়ার টুকরোগুলো না হয় গুনা যাচ্ছে। আপনাদের বেলায় তো সেটাও সম্ভব না হতে পারে।  ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি, আমলে নিন। সময় থাকতেই সতর্ক হোন। আহত সিংহরা কিন্তু বড়ই খতরনাক হয়ে থাকে।

দুই
 
যে ছবিকে কেন্দ্র করে এই ােভ, কী আছে সেখানে? কৌতূহল আছে অনেকেরই। মুসলমানরা বুঝতে পারছেন নবীজীকে কটাক্য করে ছবিটিতে কিছু একটা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা কতটা জঘন্যভাবে, অনেক মুসলমানই জানেন না। জানলে কোনো মুসলমান আজ ঘরে বসে থাকতে পারতো না। পাগলের মতো বেরিয়ে আসতো রাস্তায়। বলতো, আমার নবীকে নিয়ে  ফাজলামো করা সেই বেজন্মার কলিজাকে কুকুরের খাদ্য  না বানিয়ে এবার আর ঘরে ফিরবো না।
বিশ্বনবীর  কোনো ধরনের চিত্র অঙ্কন নিষিদ্ধ। অথচ মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত দিতে নবীকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। তাও আবার প্রিয়নবীকে উপস্থাপন করা হয়েছে চরম বেয়াদবের মতো, বিকৃত করে। ছবিটিতে অভিনিত চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে; মুহাম্মাদ, খাদিজা, আবু বকর, উমর, বেলাল ইত্যাদি। এখানে প্রথমেই আমি নাউজুবিল্লাহ  বাক্যটি উচ্চারণ করে রাখছি।  ছবির বর্ণনায় প্রতি বাক্যের সাথেই এই শব্দটি ব্যবহার করা অপরিহার্য। প্রতিটি লাইনে লাইনেই এই বাক্য বলা দরকার হবে।

 ইজরাইলি বংসোদ্ভুত আমেরিকান কুলাংগার স্যাম বাসিল নির্মিত এবং অ্যালান রবার্টস পরিচালিত ‘দ্য ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ ছবিতে প্রিয়নবী সা.কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা দেখলে ভেতরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকা মুসলমানের পে নিরব থাকা কঠিন। পুরোদমে একজন সন্ত্রাসী ও চরিত্রহীন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে আমার নবীকে। সেই নবীকে, আরবের কাফিররা পর্যন্ত  যার সুন্দর চরিত্রকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করতো। ছবিটির ১৩ মিনিটের ট্রেলারটি দেখলেই যে কোনো মুসলমানের রক্ত গরম হয়ে যাবে। উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ এখানে শেয়ার করছি।

১  ছবিতে দেখানো হয় ‘মুহাম্মদ  ইজ আওয়ার মেসেঞ্জার, এন্ড দ্য কুরআন  ইজ আওয়ার কনস্টিটিউশন’ স্লোগান দিয়ে রক্তমাখা তরবারি নিয়ে গর্জন করছে কিছু মানুষ। তাদের মুখে আর্টিফিশিয়াল লম্বা দাড়ি, পরনে সাদা কুর্তা আর মাথায় পাগড়ী। এরা সন্ত্রাসী, এরা ইসলামিক টেরোরিস্ট! এরা দলবেধে খৃষ্টানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে! লুটপাট করছে তাদের সম্পদ। এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা রাস্থায় সামনে পড়া নারীরাও। যাকে সামনে পাচ্ছে, তরবারীর আঘাতে হত্যা করছে তাকেই!---অথচ তখন আর এখন, সর্বযুগেই এই কালচারের ভিকটিম হলো মুসলমান। ইহুদী-খৃষ্টানরাই মুসলমানদের সাথে এমন বর্বর আচরণ করে থাকে। 
২, দেখা যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা অপারেশন থেকে অফিসে ফিরে তার নারী সহকারীদের জানাচ্ছেন, মুসলমানরা শত শত খৃস্টানদের হত্যা করছে। ওরা ইসলামিক সন্ত্রাসী।  তিনি ব্লাকবোর্ডে  সেটাকে ব্যাখ্যা করেন এভাবে-

Man+X=Bt
Bt-X=man
ম্যান  প্লাস এক্স ইকোয়েলটু ইসলামীক টেরোরিস্ট। আবার ইসলামীক টেরোরিস্ট মাইনাস এক্স  ইকুয়েলটু ম্যান।
৩,  মুখে বিকটদর্শন কালি মাখা একজনকে  যে চরিত্র দেয়া হয়েছে, সেই চরিত্র’র নাম হচ্ছে বেলাল!  সে তাবুর বাইরে এসে দেখে মুহাম্মদ  অত্যন্ত দৃষ্টিকঠুভাবে হাড্ডি থেকে কাচা মাংশ ছিলে খাচ্ছেন। সে  বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, মুহাম্মদ, দ্য বাস্টার্ড, তোমাকে তোমার স্ত্রী ডাকছে, তাবুর ভেতর। জলদি এসো। তখন সেখানে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ আরেক মেয়ে হাত থেকে  হাড্ডিটি  কেড়ে নেয়। মুহাম্মদ বলেন, এ্যাই! সবটুকু শেষ করিস না।
আমার জন্য রাখিস।
মেয়েটি তখন বলে, ঠিক আছে বাস্টার্ড, দ্য আননউন ফাদার!
----পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে’ সম্মানী বংশে জন্মনেয়া সর্বকালের স্বীকৃত সর্বশ্রেষ্ট মহামানবকে  বলা হচ্ছে বাস্টার্ড! পিতৃ পরিচয়হীন!! ফাজলামোরও তো একটা সীমা থাকা উচিত ছিলো!

৪, মুহাম্মদ তাবুর ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে অপো করে ছিলেন খাদিজা। কালো বোরকা পরিহিতা অবস্থায় পায়চারি করছেন তিনি। মুহাম্মদকে দেখেই খাদিজা বলেন,
মুহাম্মদ, বসো। আমি তোমাকে কী আদেশ করি মন দিয়ে শোনো। 
মুহাম্মদ  বসেন ফোরে। হাটুর একটু নিচ অব্দি  লম্বা আলখেল্লা পরা মুহাম্মদ এর আলখেল্লার নিচে কিছু ছিল না। খাদিজাকে তখন বলতে শোনা যায়, মুহাম্মদ, কাভার ইওরসেলফ।
‘অহ সরি’ বলে কোসন দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতে থাকেন মুহাম্মদ। হঠাত সামনের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যান তিনি । খাদিজা বলেন-
কী হয়েছে? ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি?  
তিনি বলেন, আমি ফেরেশতা দেখছি। ভয় করছে।
তখন খাদিজা উরু পর্যন্ত  কাপড় উঠিয়ে মুহাম্মদকে পায়ের নিচে আশ্রয় দেন। মাথা থেকে  ওড়না ফেলে দিয়ে বলেন, তাকিয়ে দেখো তো, এখন দেখা যায় কি না? মুহাম্মদ  তাকান, হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় বলেন,  হি ইজ গন, সে চলে গেছে!
৫, মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছেন খাদিজা। তাঁর সামনে একটি গাধা। ছবিতে মুহাম্মদ নামের অভিনেতা এসে বলে, জানো এ হলো প্রথম মুসলমান।
এ্যাই, তোর নাম  কী রে? 
গাধা গ্যা গ্যা করে মাথা দোলালে সে বলে,  বলেছে, সে নাম বলেছে! তার নাম জাফর!  হেহেহে, জাফর।
-----বিশ্বনবীর সবচে বিশ্বস্থ সাথী হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযি.কে নিয়ে এই নোংরামিটাও করা হয়েছে এই ছবিতে।
৬, মুহাম্মদ তাবুর বাইরে সাথীদের নিয়ে বসে মদ পান করছেন। সেখানে একজন হলেন উমর। আরো অনেকেই আছে সেখানে। নারীরাও আছে। তখন একটি মেয়ে সেখানে আসে। অর্ধ উলঙ্গ পোশাকে। এসে  আবেদনময়ী ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলতে থাকে। মুহাম্মদ বলেন, তুমি ভেতরে যাও, আমি আসছি। বৈঠকের সাথী  এক মেয়ে মুহাম্মদের কাছে জানতে চায় এই মেয়ে এই পোশাকে তোমার সামনে এলো আর তুমিও তাকে একসেপ্ট করলে, এটা  কী  হলো?
মুহাম্মদ নামের অভিনেতা তখন বলে, কোরআনে আছে কেউ এসে কিছু চাইলে তাকে না করতে নেই। এই মেয়েটি  স্বামীহারা। তার চাহিদাকে মূল্যায়ন করতে হবে না?  অত:পর সে উঠে ভেতরে চলে যায় এবং মেয়েটির সাথে---------------- ধীক্কার জানালেও তো কম হবে। যে নবীর সুন্দর চরিত্রের জয়গান করতো মক্কার মুশরিক  মেয়েরাও, যে নবী জীবনেও পরনারীর দিকে নজর দেননি, তাঁকে নিয়ে এভাবে----!!

৭,   ছবিতে ১২০ বছরের এক বৃদ্ধা মহিলা বলতে থাকে, আমার বয়স একশ বিশ। কিন্তু আমি আমার জীবনে মুহাম্মদের মতো সন্ত্রাসী আর দেখি নাই। সে মেয়েদের দাসী হিসেবে ব্যবহার করে। নারী ও শিশুকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে। আর যাবতীয় অপকর্ম করে বেড়ায় তাও আবার গডের নামে। সেটা বলার পর মুসলমানরা সেই মহিলার দুই পা দুটি উটের সাথে বেধে উট দুটিকে দুদিকে হাকিয়ে দেয়। মহিলাকে এভাবেই হত্যা করা হয়!------ কল্পনা করা যায়? ইসলামের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে তো এমন পৈশাচিকতার একটা ঘটনাও ঘটেনি। মুসলমান নারীদের সাথেই বরং এমনটা অহরহ ঘটেছে, ঘটছেও।

৮, সাথীদের নিয়ে মরুভূমিতে বসে আছেন মুহাম্মদ। শলা-পরামর্শ চলছে। সাথীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছে সে,  যে আমাদের কথা মানবে না, সাথে সাথে হত্যা করে ফেলতে হবে তাকে। এটা আমার আদেশ, কুরআনের নির্দেশ। বক্তব্য’র পর অন্যরা সবাই চলে গেলে খাস কিছু সাথী নিয়ে  আড্ডায় মেতে ওঠেন তিনি। এক পর্যায়ে বলেন,------স্ত্রী সুফিয়াকে কি তোমরা দেখেছো? শী ইজ ভেরি বিউটিফুল! তার স্বামীকে দুনিয়া থেকে  সরিয়ে দিলে---কথা শেষ হতে না হতেই সাথীরা বিকৃত লৌলুপ্যে ছুটে যায়। ধরে আনে সুফিয়ার স্বামীকে। হত্যা করা হয় তাকে। তারপর তার সাথে------!!!

তিন
আমি দু:খিত। যথেষ্ট শালীনভাবে ছবিটির কিছু চিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি এখানে। এই ছবিতে এমন কিছু দৃশ্য জুড়ে দেয়া হয়েছে মুহাম্মদ চরিত্রটির মাধ্যমে, সেটা সামনে আসামাত্র চোখ বন্ধ করে ফেলা ছাড়া উপায় নেই!  সবচে জঘন্য যে চিত্রটি ধারণ করা হয়েছে, সেটা বর্ণনা করার মতো শব্দ নেই আমার কাছে। আমার আঙুলের  মতা নেই সে দৃশ্য টাইপ করতে পারে। যারা দেখেছেন, তারা জানেন। অথচ, ------

-----কেমন মুসলমান আমরা?  যে নবী সারাটি জীবন  উম্মতের ফিকিরে কাটালেন,  রাতের শেষ প্রহরে যে নবীকে  মা আয়েশা আবিস্তকার করতেন জান্নাতুল বাক্বীতে, উম্মত আরাম করে ঘুমোচ্ছে আর উম্মতের মুক্তির জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন নবী...
যে নবী সেজদায় পড়ে থেকেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নবী মাথা ওঠাও, তোমার কান্না আমি আল্লাহ আর সহ্য করতে পারছি না।

  জি না আল্লাহ, আমি মাথা উঠাবো না, আমার  সকল উম্মতকে মাফ করে দাও, একজন উম্মতের নামও জাহান্নামের লিস্টে থাকা অবস্থায় আমি মাথা উঠাবো না; দয়া করো...
 যে নবীর লাশ মোবারক কবরে রাখার পর ঠোঁট নড়তে দেখে কাছে গিয়ে শোনা গেলো নবী আমার ‘উম্মতি উম্মতি’ই বলছেন, পৃথিবী থেকে যাবার সময়ও যে নবীর মুখে ছিলো উম্মতের নাম...
ভয়াবহ কিয়ামতের দিন, যেদিন নবীরা পর্যন্ত  কাঁপতে থাকবেন থর থর করে, কথা বলার সাহস থাকবেনা কারো, মনে মনে জপতে থাকবেন,  আল্লাহ, উম্মত লাগবে না, আমাকে বাঁচাও,  সেদিন, বিভীষিকাময় সেই দিন যে নবী উত্তপ্ত হাশরের মাঠে সেজদায় পড়ে কাঁদতে থাকবেন, মুখে থাকবে একটিই বাক্য,  মালিক, আমার উম্মতকে বাঁচাও...
...সেই নবীকে নিয়ে বেঈমানের বাচ্চারা এভাবে ফাজলামো করছে আর মুসলমান ‘ ধরি মাছ না ছুই পানি’ মার্কা আন্দোলন করেই  খালাস! আজ তো মুসলমানের ঘরে বসে থাকার কথা ছিল না। আজ তো দেড়শো কোটি মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসার কথা ছিলো। আজ তো সারা পৃথিবী অচল করে দেয়ার কথা ছিলো।  হায়রে মুসলমান!

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  নবীকে অবমাননাকর এই সিনেমা নির্মানের নিন্দা করেছেন। তাও হাওয়া বুঝে, এক সপ্তাহ পরে, খোদ আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির নিন্দা জ্ঞাপনের পর!
একাধিকবার হজ্ব ও ওমরা পালনের বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী  আমাদের মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছ থেকে এ পর্যন্ত কোনো  জোরালো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে বলে জানা যায়নি।
আওয়ামীলীগ-বিএনপি দলগতভাবে এখনো কিছু বলতে যায়নি।
আশ্চর্য আমাদের রাজনীতি! যে রাজনীতির মূল্য ঈমানের অনেক উপরে!! বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা সহ্য করতে পারে না। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বাজে কথা বললে বিএনপি রাস্তায় নেমে আসে। অথচ, বিশ্বনবীকে নিয়ে এমন জঘন্য কাজ করার পরও এরা নিরব! তাদের কাছে নবীর ইজ্জতের চে তাদের নেতার ইজ্জতই তাহলে বড়?
বছরখানেক পরে এরাই আবার আল্লাহর নাম নিয়ে নবীজীর প্রতি ভক্তিতে গদগদ হয়ে মুসলমানের কাছে ভোট চাইতে আসবে!  মানুষও আবার তাদেরকে গ্রহণ করে নেবে।
হায়রে মানুষ!!

চার
বিশ্বনবী সা. ও মুসলমানদের উপর ইহুদীদের এই ক্ষোভ নতুন নয়। ইতিহাসের ছাত্রদের জানা আছে এর সূচনা  ৫৭০ খৃষ্টাব্দে। বনি ইসরাইল আর বনি ইসমাইল ইস্যুতে। বনি ইসরাইল বংশেই ছিলো নবীদের আনাগোনা। তাদের আকাঙ্খা ছিলো বিশ্বনবী বনি ইসরাইল বংশেই আসবেন। কিন্তু আল্লাহপাক বিশ্বনবীকে বনি ইসমাঈল বংশে পাঠানোয় তারা চরমভাবে অপমানিত বোধ করে। তখন থেকেই  তাদের ক্ষোভ। ইসলাম, মুসলমান আর নবীজীকে যতভাবে কষ্ট দেয়া সম্ভব, দিয়েছে তারা, যগে যুগে। আজও সেটা অব্যাহত আছে। 
  এর আগে খৃষ্টান লেখক  কর্তৃক দ্য হান্ড্রেড (সেরা একশ মনিষী) বই লেখার পর আর সেখানে হযরত মুহাম্মদ সা.কে প্রথম স্থানে রাখার পর ইহুদীরা সালমান রুশদীকে দিয়ে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস লিখিয়েছিলো।  আল্লাহর বিশেষ কুদরতে বন্ধ না হলে ইহুদীদের এই কূটতন্ত্র ক্বিয়ামতের আগে বন্ধ হবার আপাতদৃষ্ট কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিশ্বনবী হজরত মহানবী (সা.)-এর চরিত্র হননের অপচেষ্টা এবং ইসলাম ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে ইহুদি আর খৃষ্টানরা হাত মিলিয়েছে নতুন করে। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা স্যাম বাসিল  নামের ইসরাইলি মার্কিন এএফপিকে  দেওয়া সাক্ষাতকারে  জানিয়েছে, ৫০ লাখ ডলারের চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে  ১০০ জন ইহুদি তাকে অর্থ সাহায্য দিয়েছে। স্যাম বাসিল প্রযোজিত এই সিনেমাটির ডিরেকটর  অ্যালান রবার্টস নামের আরেক কুলাংগার। তবে  এগুলো তাদের আসল নাম কি না, তা নিয়ে বার্তা সংস্থাগুলোর সন্দেহ থাকলেও  এ ব্যাপারে  কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, এই কাজে ইহুদী আর খৃষ্টান যৌথভাবে অংশীদার।

 ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে আবারও ক্রুসেড ঘোষণা করেছে তারা। এ ক্রুসেডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিশ্ব মুসলিমকে নবী প্রেম ও ইমানদারের পরিচয় দিতে হবে। অবিলম্বে এ সিনেমাটি বন্ধ এবং এর নির্মাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্টের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দিতে হবে ইসলাম ও রাসুলকে (সা.) নিয়ে চরম অবমাননাকর  এই ছবি প্রকাশ করে  বিশ্বমানবতার বুকে  যে আগুন ধরানো হয়েছে, অবিলম্বে এই ছবি নিষিদ্ধ ও তার পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না  দেয়া পর্যন্ত  এই আগুন নিভবে না। ওয়াশিংটন যদি এটা না করে, তাহলে দুদিন আগে হোক আর পরে,  এর পরিণতি হবে অত্যন্ত  ভায়াবহ।



শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

ব্রেইন সার্ভিসিং---!!!



গতকালের পর


বেশি ব্যবহারের ফলে হোক আর ব্যবহার না করার কারণে, ব্রেইনে মাঝেমধ্যে জ্যাম ধরে যায়। কখনো কখনো মনে হয় ব্রেইন বুঝি হ্যাং করেছে! গতকাল আমরা ছিলাম ২০৫৬ সালে। ২০৫৬ থেকে এখন আমরা চলে এসেছি হাল জামানায়।


ব্রেইনের কাজকর্মে গতিশীলতা আনার চিন্তা-ভাবনা থেকেই জাপানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্রেইন সার্ভিসিং ওয়ার্কশপ! (আল্লাহর ওয়াস্তে কেউ আবার আমার কাছে জানতে চাইবেন না ওটা জাপানের কোথায় অবস্থিত? ঐকিক নিয়মের অংকের মতো মনেকরি সূত্রে আগাতে হবে!) ওরা চিন্তা করে দেখেছে ব্রেইনকে মাঝেমধ্যে ওয়াশ ও সার্ভিসিং করা নাহলে ব্রেইনের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পাবে। সেই চিন্তা থেকেই তাদের এই বর্ণালী আয়োজন।


কোনো এক দেশের মাঝারি মানের এক নেতা গেছেন জাপান ভ্রমণে। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে উনার চোখে পড়লো সার্ভিস সেন্টারটি। যথেষ্ট কৌতূহলি হলেন তিনি। উনার মাথা প্রায়ই ঝিন ঝিন করে! ব্যাথাও থাকে প্রচুর। কখনো কখনো ভোতা ধরণের যন্ত্রণাও হয়! তিনি ভাবলেন এটা বেশি ব্যবহারের কারণেই হয়ে থাকবে। সুযোগ যখন পাওয়া গেছে একটা, কাজে লাগানো দরকার।


তিনি তার ব্রেইনটি সার্ভিসিং এর জন্য দিয়ে দিলেন। ওরা সার্ভিস চার্জ নেয় হান্ড্রেড পার্সেন্ট অগ্রিম পদ্ধতিতে। তিনি চার্য পরিশোধ করলেন। ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষ উনাকে রিসিট ধরিয়ে দিলো। সাত দিন পর এসে আপনার ব্রেইন নিয়ে যাবেন।


-------------

------------------

সাত দিন পেরিয়ে পনের দিন চলে যাচ্ছে কিন্তু ব্রেইনের মালিক ব্রেইন ফেরত নিতে আসছেন না! কর্তৃপক্ষ কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। লোকটি কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে-টরে গেলো কি না! আবার এমনও তো হতে পারে কোথাও খেই হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! অসম্ভব না, ব্রেইনলেস একটা মানুষ! রিসিট থেকে তারা মানুষটির ফোন নাম্বার বের করে ফোন করলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন জানালো উনি বাংলাদেশে চলে গেছেন। কবে ফিরবেন-বলা যাচ্ছে না।


সার্ভিস সেন্টার ভদ্রলোকের মেইল আইডিটি চেয়ে নিয়ে মেইল করলো উনাকে। বলল, জনাব, আপনার ব্রেইনটি সার্ভিসিং করা হয়ে গেছে। এটা এখন একদম ঝকঝকে এবং ফ্রেশ। প্লিজ, নিয়ে যান।


আরো পনের দিন পর অই লোক মেইলের জবাব দিলেন। কী বলেছিলেন তিনি? সেটা আমরা একটু পরে জানবো। তার আগে স্মরণ করি কিছু অমূল্য বাণী। স্মৃতি থেকে লিখছি। শাব্দিক এদিক-উদিক হলে ক্ষমা চাই।




আল্লাহ মাল আল্লায় নিয়া গেছে !----------- সাবেক যোগাযগমন্ত্রী জনাব আলতাফ হোসেন।

শেয়ার বাজারে আছে ফটকাবাজ------------মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত

টাইটানিকও একদা ডুবিয়াছিলো
----------লঞ্চ ডুবিতে স্বজনহারা মানুষকে সাবেক নৌ-মন্ত্রী মরহুম আকবর হুসেন

এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো জঙ্গীদের প্রজনন কেন্দ্র
----------- আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ।

কম খান, দ্রব্যমূল্য কমবে।------------ সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান

ভারত আমাদের যে পরিমাণ পানি দিচ্ছে, তাই তো যথেষ্ট। ----------- পানিমন্ত্রী শ্রী রমেশ চন্দ্রসেন


তিস্তা চুক্তি কবে হবে আমি কী করে বলবো? আমি তো আর গণক নই।
-------------মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমণি

আগে জানতাম কুকুর লেজ নাড়ে, এখন দেখছি লেজই কুকুর নাড়ে---------- বিএনপিতে তারেক রহমানের প্রভাব নিয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী

দেশকে যারা অচল করে দিতে চায়, তাদের বিকল করে দেয়ার জন্য ছাত্রদলই যথেষ্ট।-----------------সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

সরকারের পক্ষে কারো বেডরোম পাহারা দেয়া সম্ভব না।---------------মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

-------- এই মুহুর্তে আর মনে পড়ছে না!!

-----------------
---------------------

পনের দিন পরে অই লোক মেইলের জবাব দিয়েছিলেন। উনি যা বলেছিলেন, বাংলা করলে সেটা অনেকটা এভাবেই দাঁড়ায়-


জনাব, আমি এখন বাংলাদেশে আছি। বেশ আছি। এই অল্প দিনে বিশেষ কারণে এখানকার নাগরিকত্ব পেয়ে গেছি। শুধু তাই না। আপনারা হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না আমি এখানকার মন্ত্রিত্বের একটি পোষ্টও পেয়ে গেছি। অবাক হবার দরকার নেই। এদেশে তারচে”ও আশ্চর্য ঘটনা ঘটে! আচ্ছা তাহলে, সে অনেক কথা। আপনাদের জেনে কাজ নেই।


এদেশে বেশ আছি আমি। দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছি ঠিকটাক। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আপনারা আমার রেখে আসা ব্রেইন ফেরত আনতে বলছেন তো! থাকুক, আপাতত অটা আপনাদের কাছেই থাকুক। এ দেশে এটার খুব কিছু দরকারও হয় না। অই বস্তু ছাড়াই যে যার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। আমিও। কখনো যখন অন্য দেশে যাবো, অটার প্রয়োজন হবে। তখন নিয়ে নেবো, থ্যাংক ইউ।


------------

---------------

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে

নেতারচে' যার কাছে নীতি বড় হবে।

শুভ কামনা

২০৫৬ সালের একদিন


আজ থেকে ৫০ বছর আগে কেউ যদি বলতো, একসময় বাজারে হার্টের বাল্ব, কিডিনি, লিভার ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যাবে, কেউ বিশ্বাস করতো না। বলত, পাগল! নির্ঘাত পাগল। এই লোকটির মাথা যে পুরোটাই খারাপ, সন্দেহ নেই। কিন্তু আজ---

ঠিক একইভাবে আজ থেকে ৫০ বছর পরে বিজ্ঞান হয়তো এমন অবস্থানে পৌছে যাবে, খোলা বাজারে মানুষের ব্রেইন কিনতে পাওয়া যাবে! সেই সময়ের একটি গল্প। অনুরোধ করছি ৫০ বছর পরের মানসিকতা নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য।

------------
--------------

এক ভদ্রলোক মার্কেটে গেছেন ব্রেইন কিনতে। যে কোনো কারণেই হোক, উনার মেজো ছেলের ব্রেইন ডেমেজ হয়ে গেছে। ছেলেটি এখন বদ্ধ উন্মাদ! তিনি ঢুকলেন একটি আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক ব্রেইন মার্কেটে। অত্যাধুনিক শপিং মল। ঝকঝকে পরিবেশ। কোথাও একটু ময়লা নেই। ফ্লোরে ভাত মেখে খাওয়া যাবে-অবস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সমাগমে মুখরিত পুরো মার্কেট। তিনি ঢুকলেন পিওর ব্রেইন সাপ্লায়ার সাইনবোর্ড লাগানো একটি মলে। এই প্রতিষ্ঠানের উপর তিনি আস্থা রাখলেন কারণ, সাইনবোর্ডের কোনায় বোল্ড করে লেখা ISO 9001-2000 সার্টিফাইড।

ভদ্রলোক দোকানে ঢুকতেই সেলসম্যান এগিয়ে এসে রেডিমেট একটি হাসি দিয়ে বলল, এক্সকিউজমি স্যার! কীভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?

খুশি হলেন ভদ্রলোক। এর আগে কেউ কখনো তাকে স্যার ডাকেনি। মনে মনে ভাবলেন, যাক, স্যার হবার মতো চেহারা তাহলে আছে তার। আজ অনেকদিন পর সূষ্টিকর্তাকে মন থেকে একটি ধন্যবাদ দিলেন। সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে বললেন, একটি ব্রেইন চাই। ভালো একটি ব্রেইন। দেখান তো!

সেলসম্যান বিনীতভাবে বলল, স্যার, কোয়ালিটি কেমন হবে? আমাদের সংগ্রহে বিভিন্ন কোয়ালিটির ব্রেইন আছে। কেমন ব্রেইন চাই আপনার?
তিনি বললেন, ভালো কিছুই দেখান।
সেলসম্যান সুন্দর একটি বক্স নিয়ে এসে মেলে ধরল সামনে। এটা নিতে পারেন স্যার। ভাল মাল।
মেইড কোথায়?
এটি স্যার রাশিয়ান ব্রেইন।
দাম কতো?
এক লক্ষ টাকা স্যার, ফিক্সড।

ভদ্রলোক ভাবলেন, রাশিয়ান ব্রেইন , ভালোই হবার কথা। নেয়া যায়। তবুও অভ্যেস মতো জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, আপনাদের কাছে এরচে’ ভালো ব্রেইন আছে ?

আছে স্যার, আরো ভালো কোয়ালিটিরও আছে। সে আরো চমতকার একটি প্যাকেট খুলে আরেকটি ব্রেইন বের করল। এবারেরটি আর বশি যত্ন করে রাখা হয়েছে। বলল, এটি নিন স্যার। আমেরিকান ব্রেইন। খাটি মাল। যে লোকের ব্রেইন এটি, জানা গেছে সেই লোক জীবনেও কোনো সমস্যায় পড়েনি । খুবই উন্নত কোয়ালিটি।
ভদ্রলোক ভাবলেন, আমেরিকান ব্রেইন, অবশ্যই রাশিয়ান ব্রেইন থেকে ভাল হবে। না জানি কতো দাম হাঁকায়! জিজ্ঞেস করলেন, এটির মূল্য কতো?
সেলসম্যান বলল, এটি একটু কম আছে স্যার। এই ধরেন ৮০ হাজার পর্যন্ত রাখা যাবে।

বিস্মিত হলেন লোকটি! যেটার মূল্য বেশি হবার কথা, সেটা বলছে কম! ব্যাপার কী! হিসাবে ভুলটুল করছে না তো! পরে হয়তো দেখা গেল, মাল প্যাকেট করে দেয়ার সময় ১ লক্ষ ৮০ হাজারের বিল ধরিয়ে দিচ্ছে!! সেই সাথে কিছুটা উৎসাহীও হয়ে উঠলেন তিনি। বললেন, আচ্ছা, এরচে’ও ভালো কোনো মাল নেই?

আছে স্যার, এরচে’ও ভালো মাল আছে। এখন আপনাকে যেটা দেখাব, আপনার পছন্দ না হয়েই পারে না। সে অত্যন্ত যত্ন করে গ্লাসের ভেতরে রাখা গোল্ডেন চারকোনো একটি বক্স বের করে দিল। বলল, চোখ বন্ধ করে এই মালটি নিয়ে যান স্যার, বিশ্বের সেরা মাল।
এটি কোন দেশের?
এটি স্যার জাপানিজ।

অত্যন্ত খুশি হলেন লোকটি। এতক্ষণে ব্যাটা আসল মাল বের করেছে। জাপানিদের ব্রেইনেরচে’ উন্নত ব্রেইন আর হতেই পারে না। অরা অদের ব্রেইন খাটিয়ে কত কী আবিস্কার করে ফেলেছে! ইলেকট্রনিক পার্টস, মেশিনারিজ থেকে শুরু করে প্রযুক্তির এমন কোনো শাখা খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে অরা সফল হয়নি। চোখ বন্ধ করে কেনার মতোই মাল। কিন্তু পরক্ষণেই বিব্রতকর ভাবনায় পড়ে গেলেন তিনি। নিজের অজান্তেই হাত চলে গেলো পকেটে। ওয়ার্ল্ড ফেমাস জাপানি ব্রেইন। কিছুটা ভয়ের সাথেই বললেন, ভাই, এই ব্রেইনটি সর্বশেষ মূল্য কত? অর্থাৎ কত হলে দিয়ে দেবেন? একটু কমিয়ে বলবেন প্লিজ!!

সেলসম্যান বলল, আপনি মনেহয় স্যার লক্ষ্য করেননি আমাদের এই মার্কেটটা হল ফিক্সড প্রাইস মার্কেট। সঙ্গত কারণেই প্রথম দাম বলুন আর শেষ দাম , দাম কিন্তু অই একটাই। বেশি কথা বলে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত। এই ব্রেইনটি আপনি ৫০ হাজার টাকায় পেতে পারেন।

৫০ হাজার!!! বিস্মিত হলেন ভদ্রলোক। তাকালেন সেলসম্যানের দিকে। আন্দাজ করতে চেষ্টা করলেন ছেলেটি তাঁর সাথে ফাজলামো করার চেষ্টা করছে কি না! তাই যদি না হবে, তাহলে এমন উলটা-পালটা দাম বলছে কেনো! রাশিয়ান ব্রেইন বলল ১ লক্ষ টাকা। আমারিকান ব্রেইন যে কোনো বিচারেই রাশিয়ান ব্রেইন থেকে দামি , অথচ সে বলছে ৮০ হাজার! আবার জাপানি ব্রেইন বর্তমান বিশ্বে সবচে’ ভ্যালুয়েবল, সেটার দাম হওয়ার কথা অনেক বেশি অথচ বলছে মাত্র ৫০ হাজার!!! ঘটনা কি! ব্রেইনের দোকানে কাজ করতে করতে এই ব্যাটার নিজেরই ব্রেইনের কোথাও সর্ট সর্কিট হয়ে গেলো কি না- কে জানে! অসম্ভব না!

নিজেকে সংযত করলেন ভদ্রলোক। বললেন, এই ছেলে, আমি তো তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আপাতত সেটার চেষ্টাও করছি না। তাহলে হয়তো দেখা যাবে একটা না, এজ জোড়া ব্রেইনই কিনতে হবে। যা হোক, বেশি কথা বলে লাভ নেই। তোমাদের কাছে সবচে ভালো কী আছে সেটাই বের করো। অর্থাৎ ইনটেক পিওর কিছু থাকলে বের করে ফেলো। খামাখা সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। (মেজাজ খারাপ হওয়ায় ভদ্রলোক আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছেন, খেয়ালই করেননি!)

বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসল ছেলেটি। যেনো এই পৃথিবীর তৃ্তীয় শ্রেষ্ট বোকার সাক্ষাত পেয়েছে সে! বলল, আপনি ইনটেইক ব্রেইন চান আগে বলবেন না! আসুন আমার সাথে।

সে ভদ্রলোককে নিয়ে ঢুকলো দোকানের ভেতরের একটি রোমে। অত্যন্ত মনোরম একটি ফ্রিজ খুলে স্বর্ণের বক্সে রাখা একটি ব্রেইন বের করে বলল, এই নিন স্যার, খাটি মাল। সম্পূর্ণ ইনটেক। একদম। গায়ে একটু আচর পর্যন্ত লাগেনি। এরচে’ ফ্রেশ কোনো মাল পৃথিবীতে আর পাবেন না।

ভদ্রলোক মনে মনে ভাবতে লাগলেন, বিশ্বের সেরা এই ব্রেইনটি কিনতে হলে অবশ্যই তাকে তাঁর বাড়িটি বিক্রি করতে হবে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলেন, এটির দাম জানি কতো---??
এটি একটু বেশি স্যার। বুঝতেই পারছেন অক্ষত মাল। এটার মূল্য ৫ লক্ষ্য টাকা।
স্বস্থির নিশ্বাস ফেললেন তিনি। বাড়ি বিক্রি না করলেও চলবে। ব্রেইনটির ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠলেন তিনি। এমন একটি ব্রেইন তাঁর ছেলের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া গেলো আর কী চাই!! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই মহা মূল্যবান ব্রেইনটি কোন দেশের?
সেলসম্যান নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলো, এটি স্যার বাংলাদেশি ব্রেইন!!

সকল আগ্রহ মাটি হয়ে গেলো । এই ছেলে যে ফাজলামো করছে, আর কোনো সন্দেহ নেই। রাগে ঘামতে শুরু করলেন তিনি। এতোক্ষণ ধরে উল্টা-পাল্টা দাম বলছে। আর এখন যেটা তিনি মাগনা দিলেও নেবেন কি না সন্দেহ, সেটার দাম বলছে ৫ লাখ! ফাজলামোরও তো একটা সীমা থাকা দরকার। পাড়ার কোনো ছেলে এমন করলে এতক্ষণে থাপড়ে দাঁত ফেলে দিতেন। এখানে এটি সম্ভব না। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আছে। সিকিউরিটিও টাইট।

অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললেন, দেখো ছেলে, আমি তোমার বাবার বয়সী। আমার সাথে ইয়ার্কি করা তোমার শোভা পায় না।
সে বলল, আমি আপনার সাথে মোটেও ইয়ার্কি করছি না স্যার। আপনি ব্রেইন দেখতে চেয়েছেন, আমি দেখিয়েছি। আপনি দাম জানতে চেয়েছেন, বলেছি। যেটার যে দাম সেটাই বলেছি। আর একটি কথা , এখানে প্রতিটি পণ্যের যথাযত মূল্যই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।

এবারে খানিকটা বিব্রত হলেন ভদ্রলোক। ছেলেটির কথা বলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সে ইয়ার্কি করেনি। কিন্তু ন্যায্য মূল্যই যে বলেছে, সেটাই বা মানবেন কী করে? তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন দাম বলছে উল্টা-পাল্টা! অবশেষে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি আমাকে ব্রেনগুলোর দামটা একটু ব্যাখ্যা করো তো! দেখি তোমাদের মাপকাটিটা কেমন!

ছেলেটি বলল, দেখুন স্যার, প্রথমে আপনাকে দেখিয়েছি রাশিয়ান ব্রেইন। এটি একটু ব্যবহৃত, ব্যবহারের ফলে একটু ক্ষয় হয়েছে, দাম ১ লক্ষ টাকা। তারপর দেখানো হয়েছিল আমেরিকান ব্রেইন। সেটি আরো বেশি ব্যবহৃত, আরো বেশি ক্ষয় হওয়া, তাই দামটাও একটু কম, ৮০ হাজার। তারপর জাপানি ব্রেইন, ৫০ হাজার বলেছিলাম না? ঠিকই আছে। ওটা অত্যাধিক ব্যবহৃত ব্রেইন। জাপানিরা বলতে গেলে জন্মের পরের দিন থেকেই ব্রেইন ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। বুঝতেই পারছেন কত বেশি ব্যবহৃত মাল এটি। তাই দামটাও কম। আর বাংলাদেশি ব্রেইন!

বাংলাদেশি ব্রেইনের দাম সবচে বেশি কারণ, জীবনে এই ব্রেইন কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। বাঙালিরা কখনো ব্রেইন ব্যবহার করে না। জন্মের সময় সাথে করে নিয়ে আসা আল্লাহর দেয়া ব্রেইনটি অক্ষত অবস্থায় নিয়েই কবরে চলে যায়। তো জীবনেও ব্যবহার না করার ফলে ব্রেইনটি থেকে যায় সম্পূর্ণ অক্ষত। একদম নতুন। এ জন্যই এটির মূল্য সবচে বেশি।
------------
----------------
ভদ্রলোক শেষ পর্যন্ত উনার ছেলের জন্য ব্রেইন কিনেছিলেন কি না, কিনলেও কোন দেশেরটা , সেটা আমাদের জানা জরুরি না। আমরা ভাববো বাংলাদেশি ব্রেইন নিয়ে

বিশ্ব ধরা খাওয়া দিবস---!!!


প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! গলা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে আছে। হবারই কথা। ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে ছিল যে সূর্য, সেটি আজ মাথার ৯ ইঞ্চি উপরে! অবস্থা ভয়াবহ! এরই মধ্যে ঘুরছি আমি। বিশাল মাঠে। খোঁজছি পরিচিত কাউকে পাওয়ার আশায়। যদিও জানি, লাভ নেই। আজ কেউ কাউকে না চেনার দিন। আজ মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দিন।

বাবার কাছে গিয়ে সন্তান বলবে, বাবা, সামান্য একটু পূণ্যের জন্য ধরা খেয়ে গেছি বাবা। একটু সাহায্য করেন না!

বাবা বলবেন, কে তুমি বালক? তোমাকে তো চিনতে পারছি না! আর আমাকে বাবা বলছ কেনো-পৃথিবীতে থাকতে আমি তো বিয়ে করেছিলাম বলেই মনে করতে পারছি না। তাহলে তুমি আমার ছেলে হবে কীভাবে??

সন্তান যাবে মায়ের কাছে। সেই মা, মাসের পর মাস যে মায়ের কলিজায় লাথি মেরেই ছিল পৃথিবীতে আসা। সেই মা, শীতের রাতে যে মায়ের বুক ভিজিয়ে ছিল বারবার তবুও বিরক্ত হননি একবারের জন্যও। সেই মা, ঝড়-ঝাপটা থেকে সন্তানকে আগলে রেখেছেন বুক পেতে দিয়ে। ছেলের অসুস্থতায় অস্থির হয়ে গেছেন, বলেছেন হে আল্লাহ, যত খুশি কষ্ট আমাকে দাও, আমার সন্তানকে ভাল করে দাও ------------- সেই মায়ের কাছে ।


মা, ও মা! সামান্য একটি পূণ্যের জন্য আমি ধরা খেয়ে গেছি। আজ কেউ আমাকে সাহায্য করছে না গো মা। শেষ ভরসা হিসেবে তোমার কাছেই এলাম। তুমি আমার মা। মায়েরচে’ আপন তো আর কেউ নেই। আমাকে একটি মাত্র পূণ্য দিয়ে উদ্ধার করো আজ।


মা বলবেন, কে বাবা তুমি! তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না! তোমার দুরবস্থার কথা শুনে খারাপ লাগছে। কিন্তু আমি কী করব বলো। আমি নিজেই আজ পেরেশান। তা ছাড়া তুমি আমাকে মা বলছো! পৃথিবীতে আমার তো বিয়েই হয়নি, তুমি আমার ছেলে হবে কী করে!! এই হল আজকের হালত।


------------

---------------

হাশরের দিন আজ। অন্য কথায় বলা যায়
ধরা খাওয়া দিবস। সবাইকেই আজ ধরা খেতে হবে। ভাগ্যবান সামান্য কিছু মানুষ আছেন, যারা আজ ধরা খাবেন না। তাদের কারো সাথে এখনো দেখা হয়নি আমার। হবে হয়তো। দেখা যাক।

হাঁটছি আমি। হঠাৎ একটি জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। ধুসর বাদামী কালারের সাফারী পরা একজনকে মানুষকে ঘিরে কয়েক ড’জন মহিলা। তাদের সাথে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। মানুষটি বসে আছেন গালে হাত দিয়ে। আজ সাফারী পরার দিন না। আজ কারো গায়েই কাপড় থাকার কথা না। সাফারী আমার দৃষ্টি বিভ্রম, সন্দেহ নেই।


খুব পরিচিত মনে হতে লাগলো মানুষটিকে। কোথায় যেনো দেখেছি! কোথায় যেনো---


কাছে গেলাম আমি। আরে! এ তো আমাদের হু মু এমদাদ সাহেব! উনার আশে পাশে উনার দলের আর কাউকেই দেখতে পেলাম না। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। গাছেরটা খেয়েছেন, সাথে থেকে তলারটাও কুড়িয়েছেন, উনার তেমন বন্ধুরা পৃথিবীতে থাকতেই সুযোগ মত কেটে পড়েছিলেন আর আজ তো কিয়ামত।


উনার কাছে গেলাম আমি। কথাবার্তা বলে যা জানলাম, তা হচ্ছে, অনেকগুলো কারণে আজ তিনি ধরা খেয়েছেন। যে মহিলারা ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘিরে রেখেছেন তাকে, তাদের দাবি, তাদের সবগুলো সন্তানের বাবা হলেন তিনি! কিন্তু হু মু এমদাদ সাহেব সেটা স্বীকার করতে চাইছেন না! আশ্চর্য! তিনি যাকে নিজের পূত্র বলে দাবি করছেন, সেই ছেলে যে উনারই, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো পিতৃ্ত্বের দাবি তোলা হচ্ছে তাকে ঘিরে, তিনি সেটা মেনে নিচ্ছেন না!!


ফেরেশতারা পড়েছেন মহা মুশকিলে। এখন রীতিমত ডিএনএ টেস্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যাচ্ছেন আল্লাহ পাকের কাছে। এ ব্যাপারে করণীয় কী, সেটির সিদ্ধান্ত আনতে হবে। আমি ফিরে আসলাম সেখান থেকে। এই ব্যাপারে আপডেট জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। সে পর্যন্ত আমরা বসে না থেকে বরং অন্য দিকে যাচ্ছি।


------------

------------------

ঘুরতে ঘুরতে আমার দেখা হল ডঃ জামাল হুসেনের সাথে। তিনি একজন বিখ্যাত আইনজীবি ছিলেন। উনার কাহিনী কি! জিজ্ঞেস করলাম ফেরেশতাকে। আমাকে জানানো হল, তিনি ধরা খেয়েছেন অন্য কারণে। উনাকে বলা হয়েছে পৃথিবীতে থাকতে তুমি যা যা করেছিলে, সব বাদ, শুধু একটি প্রশ্নের জবাব দাও। তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তুমি তোমার নিজের দেশের আলো বাতাস ব্যবহার করতে, কিন্তু তোমার হৃদয়ের টান ছিলো পশ্চিম পাড়ার দিকে! ওরাই ছিলো তোমার মনের মানুষ। নিজ দেশের স্বার্থেরচে’ ওই দেশের স্বার্থই ছিলো তোমার কাছে বড়। এমন অভিযোগ আছে তোমার বিরুদ্ধে। বলো সত্যি কি না? তুমি চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারো। বলো কী চাও তুমি?


তিনি আমতা আমতা করেছেন। জবাব দিতে পারেননি। তিনি জানেন আজ যুক্তি খাড়া করে পার পাওয়া যাবে না। আজ কথা বলবে শুধুই ডকুমেন্ট। তিনি বিড় বিড় করে শুধু বলেছিলেন,

পরম করুণাময়ের করুণা চাই আমি।
কী চাই বললে? কী চাই?
করুণা
কার করুণা?
পরম করুণাময়ের।
তিনি আবার কে?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
মানে? তুমি কি তার করুণায় বিশ্বাস করো?
জি, কেনো করবো না?
পৃথিবীতে থাকতেও করতে?

একটু থমকে উঠলেন তিনি! সারা জীবন অন্যকে জেরা করেছেন তিনি। নিজে কখনো জেরার সামনে পড়েননি। আজ পড়েছেন। বুঝতে পারছেন জেরা অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। কী বলবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।


ফেরেশতা বললেন,

কী হলো? কথা বলো---!
--------- তিনি এখনো নিশ্চুপ
কথা বলছো না কেনো? হাত বন্ধ কেনো? কথা না বললে তো হবে না!

এই ফাঁকে জানিয়ে রাখা দরকার আজ কিয়ামতের দিন। মুখ বন্ধ। সারা জীবন মুখ তথা জিহবা কথা বলেছে। সত্য-মিথ্যা , বলেছে যা খুশি, যেমন খুশি। আজ আল্লাহ আদেশ জারি করেছেন। আজ মুখ না, কথা বলবে হাত। সাক্ষ দেবে পা।


ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে হালকা ধমক দিয়ে বলা হলো, চুপ করে থাকলে তো হবে না। কথা বলতে হবে। তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে পৃথিবীতে থাকতে তুমি কি আল্লাহর করুণায় বিশ্বাস করতে? তাহলে ঊনিশশ’ কুয়াত্তর সালে তোমাদের দেশ চালনার সংবিধান যখন তৈরি করেছিলে, তুমিই তো ছিলে ফ্রন্ট লাইনের কারিগর। কোথায় ছিলো করুণার কথা? কোথায় ছিলো আল্লাহর নাম?


বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। তিনি তার মেয়ের সাহায্য নিতে চাইলেন। উনার মেয়েও আইনজীবি । তাকে জানানো হলো, আজ ওকালতি চলবে না। কিছু বলতে চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে, সেটা নিজেকেই করতে হবে। তাছাড়া কন্যাও আছেন রিমান্ডে। উল্টা-পাল্টা তো আর তিনিও কম করেননি বেঁচে থাকতে!


আমি জানি না চূড়ান্ত রায়ে কী হবে। বিচার তো এখনো শুরু হয়নি, আনুষ্ঠানিকভাবে। শুরু হোক, তারপর। চলুন, দেখি আর কার কী অবস্থা!!!


আমি আছি, ঘুরছি, সাথেই থাকুন।

সে ছিলো এক ভিন্ন সফর--- ২



পূর্ব প্রকাশিতের পর

পিনপতন নিরবতা মাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি আমি। বিশেষ ব্যবস্থায়। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি জটলা। এগিয়ে গেলাম আমি। কয়েক হাজার মানুষকে মাথা নিচে পা উপরে-অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলাম আমি। এরা কারা-জানা দরকার। কী এমন পাপ তারা করেছিল যে, আজ তাদের এই করুণ পরিণতির সামনা করতে হল!!

খোঁজ নিয়ে জানলাম এরা হচ্ছে নাস্তিক। পৃথিবীতে থাকতে তারা বলত, স্রষ্টা বলে কিছু নেই। আজ তাদের আল্লাহপাকের সামনে হাজির করে বলা হয়েছিল, তোমরা বলতে আল্লাহ বলে কেউ নেই! এখন---

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একটি শব্দই শুধু বের হয়েছে তাদের মুখ থেকে, সরি। ফেরেশতারা জানিয়ে দিয়েছেন, আজ নো সরি। যা করার করে ফেলেছ। সুযোগ দেয়া হয়েছে। আর না। আজ পরিণতি দিবস। তারপর তাদের উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে কত দিন থাকতে হবে- বলা মুশকিল। বিচারিক কার্যক্রম কতদিন চলবে, আল্লাহপাক ছাড়া কেউ জানে না। শুধু একটি অংকই জানা গেছে। কিয়ামতের এক দিন হবে পৃথিবীর হিসাবে ৫০ হাজার বছরের সমান! এর মানে এই পৃথিবীতে কেউ যদি একশ বছর বেঁচে থাকে, তাহলে কিয়ামতের এক দিনের তুলনায় সেটা হবে ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড!!

-----------
--------------

কিছু দূর এগিয়ে গেলাম আমি। বেশ কিছু সামনে গিয়ে আবিস্কার করলাম ভারি একটি পর্দা টানানো। পর্দার ভেতরে কিছু লোককে জড়ো করা হয়েছে। জানাগেল এরা উম্মতে মুহাম্মদীর আলেম সমাজের একটি অংশ। উনাদের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশি।

আমার জানামতে পৃথিবীতে থাকতে আলেমরা তো ভালো কাজই করতেন। লোকজনকে নেক কাজের নসিহত করতেন, তাও মাইক লাগিয়ে। বুঝলাম আল্লাহপাক খুশি হয়ে আলেমদের জন্য আজ বিশেষ সম্মান বা আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন, বোধকরি। আফসোস হতে লাগলো আমার। ইচ্ছে করতে লাগলো ভেতরে যাবার। চমৎকার এই ব্যাপারটি কাছে থেকে দেখা দরকার।

পর্দার কাছাকাছি গেলাম আমি। দায়িত্বশীল ফেরেশতার কাছে জানতে চাইলাম, ভেতরে কারা?
ভুরু কুচকে তাকালেন তিনি। চেহারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আমি আমার পাস দেখালাম। হাশরের মাঠে ঘুরে বেড়াবার জন্যে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিশেষ পারমিশন দেয়া হয়েছে আমাকে। পাস দেখার পর ফেরেশতার মুখের পেশিগুলো স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেল। তিনি জানালেন, উনারা আলেম সমাজ।
আমি বললাম, উনাদের এখানে বিশেষভাবে আলাদা করা হল কেন?
বিশেষ কারণ আছে।
সেই বিশেষ কারণটি কি বলা যাবে?
তিনি বললেন---

তিনি যা বললেন, তাতে আমার আক্কেলগুড়ুম অবস্থা! এমন কিছু শুনতে হতে পারে- আমার কল্পনায়ও ছিলো না। তিনি আমাকে যা জানালেন, তার সারমর্ম হল,

এখানে আলেম-উলামাদের একটা অংশকে জড়ো জরা হয়েছে বিশেষ শাস্থি দেয়ার জন্য। এরা তারা, যারা পৃথিবীতে থাকতে ঐক্যের পক্ষে লম্বা লম্বা কথা বলতেন। মাইক লাগিয়ে কুরআনের আয়াত ওয়া’তাসিমূ বি-হাবলিল্লাহি জামিয়াঊ ওয়ালা তাফাররাক্কূ, ( তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না) পড়ে পড়ে ওয়াজ করে বেড়াতেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লোকজনের কান গরম করে রাখতেন কিন্তু নিজেরা থাকতেন পরস্পর থেকে একশ হাত দূরে!

আমি ফেরেশতাকে প্রশ্ন করলাম, উনাদের সাথে আজ কেমন ব্যবহার করা হচ্ছে?
তিনি জানালেন, তাদের জন্য আজ কেঁচি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিছু বুঝতে না পেরে তাকালাম আমি। তিনি বললেন, তাদেরকে পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াত সামনে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, লিমা তাকুলূনা মা-লা তাফয়ালূন, সেটা তোমরা কেনো বলতে যা করতে না! তারা জবাব দিতে পারেননি! তাই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে তাদের জিহবা গোড়ার দিক থেকে আজ কেটে ফেলার নির্দেষ দেয়া হয়েছে! আপনি চাইলে আপনাকে ভেতরে যাবার সুযোগ দিতে পারি। যেহেতু পাস আছে আপনার।

আমি বললাম, তার আর দরকার নেই। শুনেই ভয় করছে আমার। এমন বীভৎস ঘটনা না দেখাই ভালো।

সালাম দিয়ে ঘুরে দাড়ালাম আমি। আমি মুসাফির। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না। আমাকে ছুটতে হবে।

------------
----------------

কিছু দূর অগ্রসর হলাম আরো। হঠাৎ চোখ আটকে গেল এক জায়গায়। দেখলাম ফেরাউন, কারুন, নমরুদ, শাদ্দাদ আর আবু জেহেলদের নেতৃত্বে একটি বিশাল দল একত্রে জট পাকিয়ে বসে আছে ভয়ার্ত চেহারায়। তাদের সাথে বুশ-ব্লেয়ার নেতানিয়াহুরাও আছেন। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার বাংলাদেশের পরিচিত অনেক মুখও রয়েছে এই দলে। এগিয়ে গেলাম আমি, তাদের কাছাকাছি। এ ব্যাপারে আমাকে কোন তথ্য যদি উদঘাটন করা যায়!

কর্তব্যরত ফেরেশতা আমাকে নিরাশ করলেন না। আমি যখন এখানকার ব্যক্তিবর্গ সম্বন্ধে জানতে চাইলাম, বিশেষ করে যখন জানতে চাইলাম আমার বাংলাদেশি মানুষগুলোকে কেনো এদের কাতারে যুক্ত করা হল, ফেরাউন---বুশ গংরা, ওরা তো একাধিক স্রষ্টা বা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। কেউ কেউ নাস্তিকও।এদের সাথে ওদের কী সম্পর্ক?

আমাকে জানানো হল, আপনার বাংলাদেশি যাদের দেখছেন, তারা বেঁচে থাকতে বুশ-ব্লেয়ার-ফেরাউনদের অনুস্মরণ করত। আর পৃথিবীতে থাকতেই জানিয়ে রাখা ছিলো, যে যার সাথে চলবে বা অনুস্মরণ করবে, তার সাথেই তার হাশর হবে!

মুসলমান হয়েও অমুসলিমদের সারিতে দাঁড়ানো ঐ লোকগুলোর ভাগ্যে কী আছে, সেটা জানার জন্য আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। বিচার দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়নি এখনো।

আরো সামনে এগুলাম আমি। দেখি আর কার সাথে দেখা হয়। সাথেই থাকুন--

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১২

টিপাই বাঁধ: সবলদের আত্মসমর্পন, দুর্বলের গর্জ্জে উঠা

এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচে’ বড় হুমকি কি? আওয়ামীলীগ-বিএনপির পদধারী গুটি কতেক নেতা ছাড়া দেশের সকল মানুষই একবাক্যে বলবে, টিপাই বাঁধ। টিপাই ইস্যুতে আওয়ামীলীগ গ্রহণ করেছে মিঁউ মিঁউ নীতি। বিএনপি’র অবস্থান হলো ধরি মাছ না ছুঁই পানি। ভারত আমাদের শুকিয়ে মারার প্লান করছে, আওয়ামীলীগ বলছে, মারহাবা! ভারত আমাদের ডুবিয়ে মারার পরিকল্পনা করছে, বিএনপি বলছে, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ!!

আওয়ামীলীগ টিপাই বাঁধ’র পক্ষ নিয়েছে সরাসরি। আর বিএনপি পক্ষ নিয়েছে পরোক্ষভাবে। আর আমাদের দুর্ভাগ্য, গেলো বিশ বছর ধরে এই দু'টি দলের উপরই আমরা আস্থা রাখছি। তাদের হাতেই আমরা শপে দিচ্ছি আমাদের ভাগ্যের চাবি। তারা আমাদের অধিকারের দরজায় ঝুলিয়ে দিচ্ছেন প্রমাণ সাইজের একটি করে তালা। যে কারণে অধিকারের দাবিতে চেতনার আওয়াজগুলো আমাদের গোঙানির মতো শব্দে ঘুরপাক খেতে থাকছে চার দেয়ালের ভেতরেই। শত চেষ্টার পরেও আমরা বেরোতে পারছি না এই বেষ্টনি থেকে। প্রতি পাঁচ বছর পর পর চাবি’র হাত বদল হয়, আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আর হয় না।


এদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল মাটি যেনো এই দু’টি রাজ পরিবারের নিজেদের প্রপার্টি। এ মাটিতে ইচ্ছেমতো হালচাষ করেন তারা। আমরা ষোল কোটি মানুষ হলাম তাদের হালের বলদ। ঠিক বলদও না। বলদ হলেও কিছুটা অধিকার তো পেতাম। অন্তত দ’ুবেলা খড়কুট না হোক, ঘাস তো মিলতো। আমরা তো তাও পাই না। সব তো নিজেরাই চেটে পুটে খেয়ে ফেলেন। হায়রে চাবিওয়ালা! হায়রে চাবিওয়ালি!!


দুই


টিপাই মুখে বাঁধ হলে বাংলাদেশের অবস্থা যে কী হবে, ইতো:মধ্যেই দেশের মানুষ সেটা জেনেগেছে। নিয়মিতই লেখালেখি হচ্ছে এ নিয়ে। সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হচ্ছে। সভা-সমিতি হচ্ছে। বাংলাদেশের পাঁচ কোটি মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন যেখানে জড়িত, দেশের এক তৃতীয়াংশ ভূমি যেখানে হারিয়ে ফেলতে চলেছে তার জীবনি শক্তি, এখনই রুখে দাঁড়ানো না গেলে গোটা সিলেট ও তৎসংলগ্ন বিশাল এলাকা যেখানে পরিণত হতে চলেছে উটহীন উটের চারণ ভূমি হিশেবে, তখন আতংকিত মানুষ অসহায়ের মতো লক্ষ্য করছে দেশের প্রধান দু'টি দল এই ইস্যুতে জনগণের সাথে নেই। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত তারা। মানুষ নিয়ে ভাববার সময় তাদের নেই! দেশের মানুষ মরলো কি বাঁচলো, কী আসে যায়! এখন তাদের জনগণের মাথায় কাঠাল ভেঙে খাওয়ার সময়। পাশে এসে দাঁড়ানোর এখনো দু বছর বাকী!!


টিপাই বাঁধ বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধীই শুধু নয়, অস্তিত্বেরও বিরোধী, এটা সুস্পষ্ট। মহাজোট সরকারের তিন বছর পুর্তি উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনে, আমরা আশা করেছিলাম, টিপাই বাঁধ’র প্রতিবাদে সুস্পষ্ট করে কিছু বলবেন। আমরা আশা করেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে নাকি টিপাই বাঁধ’র পক্ষে তথা ভারতের পক্ষে, সেটা স্পষ্ট করবেন। আমরা হতাশ হয়েছি। বিরোধীদল গেলো ৮ জানুয়ারি তৃতীয় রোড মার্চ করলো চট্রগ্রাম অভিমুখে। প্রধান তিনটি দাবিতে। আমরা বিস্মিত হয়ে আবিস্কার করলাম সেখানে টিপাই বাঁধ নেই! আর নিকট আগামীতে টিপাই অভিমুখে বিএনপির কোনো রোড মার্চ’র পরিকল্পনার কথাও জানা যায়নি! বিএনপি সম্ভবত পণ করেছে আবার ক্ষমতায় যাবার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে প্রয়োজনে ৬৪টি রোড মার্চ করবে। তবুও টিপাই অভিমুখো হবেনা তাদের গাড়িগুলো।


দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর টিপাই বাঁধ ইস্যুতে জনগণের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করাকে আমাদের জন্য জাতীয় বিপর্যয় বলা ছাড়া আর কী বলার থাকে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ নিজেদের থেকেই ছুটে আসতে শুরু করেছে রাস্তায়। দেখা যাচ্ছে টিপাই বাঁধ বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে ছোট বড় মাঝারি- যেমন দলই মাঠে নামছে, জনগণ এসে শামিল হচ্ছে সেখানে। ভারত কর্তৃক টিপাই মুখে বাঁধ নির্মাণের পায়তারার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পাটি রোড মার্চ করেছে। যদিও নিন্দুকেরা বলাবলি করছে, ডিগবাজ নেতা এরশাদ’র এই মার্চ ছিলো একটি রোটিন ওযার্ক। এটিরও ছক নাকি কষা হয়েছিলো অপার থেকে। আমরা জানি না সত্যি কি না। হলে হতে পারে।


এদেশের আলেম-উলামাদের ঐতিহ্যবাহি সংগঠন জমিয়তে ইলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশও একটি বিশাল রোড মার্চ করেছে। হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে সেই রোডমার্চটিতে। আমার জানায় গলদ না থাকলে মাত্র ৭ দিনের প্রস্তুতিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সেই মার্চটি। জমিয়তের সভাপতি আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমাম বাড়ি’র নেতৃত্বে সহস্রাধিক গাড়ি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ছুটেছিলো দেশ বাঁচানোর স্লোগান দিয়ে। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই টিপাই বাঁধ বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী সংগঠনগুলোই বেশি তৎপর।

এর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমীর চরমোনাই’র পীরের নেতৃত্বে টিপাই বাঁধ’র প্রতিবাদে একটি বিশাল রোড মার্চও হতে দেখেছি আমরা। হাসানুল হক ইনু’র জাসদ, বাসদ, খেলাফত মজলিস, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রতিবাদ করছে। লে: জে; যুবায়ের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে টিপাই বাঁধ বিরোধী একটি মোর্চাও গঠিত হয়েছে। অন্যান্য সংগঠনও প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধনসহ পালন করে চলেছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সম্প্রতি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পালন করেছে টিপাই বিরোধী সবচে’ আলোচিত কর্মসূচি। সংগঠনের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান’র নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সিলেট থেকে টিপাই অভিমুখি গণ-পদযাত্রার এই কর্মসুচি বিশ্ব বিবেককে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়। এতোগুলো মানুষ এতখানি দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে যেয়ে কেনো এতো কষ্ট করছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নটি ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে ব্যাপকভাবে। পদযাত্রা নিয়ে আলাদাভাবে কিছু কথা বলতে চাই এ কারণে যে, এই কর্মসূচিটির সাথে ত্যাগ’র সংশ্লিষ্টতা ছিলো সবচে’ বেশি।

তিন


সিলেট থেকে পায়ে হেটে জকিগঞ্জ। আটানব্বই কিলোমিটার যাত্রা! পেশাগত কারণে সাথে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। এ যুগের মানুষ যেখানে একশ’ গজও পায়ে হেটে যেতে রাজি হয় না, সেখানে হাজারো মানুষ সিলেট থেকে ৩২ ঘন্টা (মধ্যেখানে নামাজ ও রাত্রী যাপনের বিরতী ছাড়া) পায়ে হেটে সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জ পর্যন্ত গেলো তো। দেশের প্রতি মানুষের এই যে মমতা, এই যে ত্যাগ স্বীকারের নজরানা, বিশ্বাস করতে ভরসা পাচ্ছি এই মাটির প্রতি যখনই কোনো শকুনের চোখ পড়বে, এ মাটির সন্তানেরা সেই চোখ উপড়ে ফেলার সাহস রাখে।


দীর্ঘ এই যাত্রাপথে রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের সহানুভূতি এবং দলমত নির্বিশেষ নারী-পুরুষের সমর্থন ছিলো অভূতপুর্ব। রাস্তার ধারে মহিলারা পানির জগ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেছে। গায়ের খেটেখাওয়া গরীব মানুষেরা তাদের ঘামঝরানো টাকায় একটি ব্রেড, এক প্যাকেট বিস্কুট অথবা সাধ্যমত চিড়ামুড়ি নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আমি জানি এরা খেলাফত মজলিসের কর্মী না। আমি জানি এরা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক না। এই মানূষগুলো ছুটে এসেছিলো মাটির টানে। এরা ঘর ছেড়ে বাইরে এসেছিলো বেঁচে থাকার তাগিদে। পায়ে হাটা এই কাফেলাটি জকিগঞ্জে প্রবেশকালে এলাকার হাজার হাজার মানুষ অভূতপূর্ব রিসিপশন জানায়।


টিপাই অভিমুখি যাত্রাপথে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো হাজার হাজার বাচ্চাদের মাঝে আমি বেঁচে থাকবার আকাঙ্খা দেখেছি। তাদের চেহারায় আমি শংকিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার ছাপ দেখেছি। তারা বাঁচতে চায়। এরা ডুবে মরতে চায়না। এরা শুকিয়ে মরতে চায়না। ছোট ছোট বাচ্চাদের মাঝে আমি যে চাঞ্চল্য দেখতে পেয়েছি, বলে বোঝানো মুশকিল! তারাও কীভাবে কীভাবে জানি জেনেগেছে টিপাই মুখে বাঁধ নির্মিত হলে আক্রান্ত হবে তারাই। এই বাঁধ মূল আঘাতটি যখন হানবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তখন তারাই থাকবে এদেশে। আশ্চর্য! টিপাই বাঁধ’র ভয়াবহতার কথা আমার দেশের ছোট বাচ্চারাও বুঝে ফেলেছে কিন্তু গওহর রিজভীরা বুঝতে পারছেন না! তারা বলছেন, এই বাঁধ হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না!


দেশ পরিচালনার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে নিতে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ফতুর করে ফেলার পরও অর্থমন্ত্রী বলছেন, টিপাই বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের উচিৎ ফাইন্যান্স করা। ভারত আমাদের বুকে চালানোর জন্য ছুরি বানাবে, আর সেই ছুরি বানাতে আমরাই টাকা দেবো! মাথা স্ক্রু কী পরিমাণ ঢিলে হয়ে গেলে আমরা এমটি বলতে পারি, ব্রেইনের তার কয়গাছি ছিড়ে গেলে আমরা এমন ভাবনা ভাবতে পারি, কারো বুঝতে দেরি হবে না।


আমার দেশের গরিব মানুষ পেট ভরে দু'বেলা খাবার খেতে পারে না তবুও যে ভদ্রলোকদের গাড়ির জ্বালানি সাপ্লাই দেয়, তেমন এক মহা পন্ডিত, আমার দেশের পানিমন্ত্রী বলেন, ভারত দয়া করে যেটুকুন পানি দিচ্ছে, তাই তো যথেষ্ট! দালালীরও তো একটা সীমা থাকা দরকার।


চার


বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও বিএনপি টিপাই ইস্যুতে দেশের মানুষের সাথে নেই। আওয়ামীলীগ সরাসরিই টিপাই বাঁধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর বিএনপি নামকাওয়াস্তে বিরোধিতা করছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী মনমোহন সিং এর কাছে একটি পত্র লিখে এবং সিলেটে আধাবেলা হরতাল ডেকে জাতিকে উদ্ধার করে ফেলেছেন! কী লিখেছিলেন তিনি, আমরা জানি না। আর মনমোহন কী এমন মন্ত্রমিশ্রিত জবাব দিলেন যে, নেত্রী আমাদের সন্ত্রষ্ট হয়ে গেলেন, জাতি জানে না। আসলে দেশের মানুষের কথা বিবেচনায় আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র মাঝে গুণগত কোনো পাথ্যক্য নেই। নীতি তাদের অভিন্ন,


মউতা জান্নাতমে যায়ে ইয়া জাহান্নামমে, উনকো সিরিফ হালুয়াকি জরুরতহে।


আমরা সাধারণ জনগণ কখনো হরতালের সমর্থন করি না। আমরা বলছি না টিপাই ইস্যুতে দিনের পর দিন হরতাল দিয়ে দেশের অর্থনীতির সাড়ে বারোটা বাজিয়ে দেয়া হোক। তর্কের খাতিরে বলছি, এই বিএনপিকে তো আমরা খালেদা জিয়ার বাড়ির জন্যও সারা দেশে হরতাল করতে দেখলাম। যে বাড়ির সাথে একমাত্র জিয়া পরিবার ছাড়া দেশের একজন মানুষেরও স্বার্থ জড়িয়ে নেই, সেই বাড়ির জন্য সারাদেশে সারাদিন হরতাল অথচ, যে দাবির সাথে এদেশের ষোল কোটি মানুষের বেঁচে থাকার সম্পর্ক জড়িত, সেই টিপাই বাঁধ’র প্রতিবাধে শুধু সিলেটে, তাও আধাবেলা... তারপরও বিএনপি যখন দেশের মানুষের জন্য মায়া কান্না করে, যখন বলে আমরা এদেশের মাটি ও মানুষের বন্ধু, তখন দু:খ হয়। বলতে ইচ্ছে করে, ক্ষমা করো বন্ধু, মাফ চাই দোয়াও চাই। তোমার মতো বন্ধু আমাদের না থাকলেই ভালো। কু-বংশ থেকে নি:বংশ ভালো।


বিএনপি যে রাজনৈতিকভাবে কত বেশি দেউলিয়া হয়েগেছে, সেটা বোঝবার জন্যে খুব একটা ভাবাভাবি না করলেও চলে। আমি জানি না বিএনপির থিংক ট্যাংক বসে বসে মাছি মারা ছাড়া আর কী কাজটা করছে! এদশের মানুষ যেখানে অস্তিত্বের প্রশ্নে বিপর্যস্থ, দেশের সরকার যেখানে জনগণের সাথে নেই, তখনই তো বিরোধীদলের উচিৎ ছিলো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আরে বাবা, দেশের সার্থে না হোক, অন্তত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হলেও তো বিএনপির উচিৎ ছিলো টিপাই বাঁধ’র প্রতিবাদে কাঁথাবালিশ নিয়ে মাঠে চলে আসা।


বিএনপি’র নীতি নির্ধারকদের ঘিলু নিয়ে আমাদের করুণা হয়। অতি সহজ এই ব্যপারটিও তারা বুঝতে পারলো না যে, তারা যদি টিপাই ইস্যুতে আন্দোলনের লাগামটি হাতে নিতে পারতো, তারা যদি আমজনতার কাতারে চলে এসে জনতার কাধে কাধ মিলিয়ে গর্জ্জে উঠতে পারতো ভারতীয় এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, তাহলে দেশের মানুষ, দলমত নির্বিশেষ এদেশের সকল মানুষ বিএনপির পাশে এসে দাঁড়াতো। হায়রে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা! আর ঘটনা যদি পশ্চিম দিকের কোথাও প্যাঁচ খাওয়ানো হয়ে থাকে, বিশেষ কোনো চাবিওয়ালা যদি বিএনপি’র মুখে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে থাকে, যদি বলে থাকে, ভারত আমাদের বন্ধু, আমাদের এই বন্ধুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আমাদের নেক নজর থেকে বঞ্চিত করে ফেলবো, আর এমন কোনো কারণে যদি হয়ে থাকে বিএনপি’র এই পাশ কাটিয়ে চলা, তাহলে ছুটো মুখে একটি বড় কথা বলে রাখি। আমও যাবে, ছালাও যাবে।


পাঁচ


সিলেটের মাননীয় মেয়র! আপনার উদ্দেশ্যে বলি।

এই সিলেটের মনুষ আপনাকে তাদের সর্বোচ্চ ভালোবাসাটুকু দিয়েছে। আপনাকে সেটা সব সময় স্বীকার করতে শুনেছি। আপনাকে আমি বলতে শুনেছি প্রয়োজন হলে এই সিলেটের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়ে আপনি এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চান। সময় এসেছে এবার। সিলেট আজ অস্তিত্বের প্রশ্নে দিশেহারা। প্রপার অভিভাবক ছাড়াই শুরু করেছে বেঁচে থাকার লড়াই। এ লড়াইয়ে আপনাকে শুধু নিরব সমর্থন দিলেই যথেষ্ট হবে না। নেতৃত্ব দিতে হবে। আপনি আপনার দল করুন, সমস্যা নেই। কিন্তু টিপাই বাঁধ ইস্যুতে ভুলে যান দলের কথা। আপনি জানেন কেবল দলের মানুষই আপনাকে গেলো নির্বাচনে ভালোবাসা দেয়নি। গোঠা সিলেটবাসীই দিয়েছিলো। সিলেটের কান্না কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন! তাহলে কী করে পারছেন দূরে থাকতে? চলে আসুন জনতার কাতারে। তা না হলে সিলেটবাসীর আপনাকেও ক্ষমা করবে না।

প্রিয় সিলেটবাসী! আমাদের তো বাঁচতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত বংশধরকে তো বাঁচাতে হবে। আমাদের সিলেটের বাঁচামরার এই আন্দোলনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি আমাদের সাথে নেই। এর হিসাব আমরা দু’বছর পরেই নেবো। এখন আসুন, দলমতের উর্ধে উঠে রাস্তায় নামি। চলুন, আমরা তিন কোটি মানুষ বেঁচে থাকার এই সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ি। মনে রাখতে হবে কোনো জাতি যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুর জন্য তৈরি হয় না, তারা বাঁচতে পারে না। চলুন, মৃত্যুর জন্য তৈরি হই। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে আমরা যদি এটুকুন করতে না পারি, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

দায়হীন দায়বদ্ধতাঃসংবাদ এবং সঙবাদ

দায়হীন দায়বদ্ধতাঃসংবাদ এবং সঙবাদ


সংবাদপত্রেরচে’ ক্ষণস্থায়ী আর কোনো প্রজাতি আল্লার জমিনে আছে বলে আমার জানা নেই। বিশেষত দৈনিক সংবাদপত্র। ‘প্রজাতি’শব্দটির প্রয়োগে কারো প্রশ্ন থাকলে জানিয়ে রাখি, সংবাদপত্রকে জড়পদার্থের কাতারে গণ্য করার কোনো কারণ নেই। আমি দৃঢ়ভাবেই মনে করি, সংবাদপত্রের জীবন আছে। জীবনি শক্তি আছে। সেই শক্তি প্রয়োগের শক্তিও আছে। এবং সেটা অন্য যে কোনো কারো চেয়ে অনেক বেশি। তবুও বললাম। কেনো বললাম, সেই গল্পই ফাঁদতে বসেছি আজ।

২৪ ঘন্টারও কম এক্সপেয়ার ডেট নিয়ে জন্ম নেয় একটি খবরের কাগজ। শারীরিক গঠন প্রণালীর দিক দিয়ে সেই কাগজ আবার খুবই দুর্বল। আমরা বলি নিউজ প্রিন্ট। একই সঙ্গে আবার স্থায়িত্ব ও ক্ষমতার দিক দিয়ে বিচার করলে সংবাদপত্রের ধারেকাছেও কিছু নেই। এক্ষেত্রে নিউটন সাহেবের তৃতীয় সূত্রটি বেশ ভালভাবেই কার্যকর। প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।


একটি দৈনিক সংবাদপত্রের আয়ূস্কাল কয়েকঘন্টা মাত্র। আবার শত বৎসরও। যুগের পর যুগ চলে যায়, বর্তমান হারিয়ে যায় অতীতের অরণ্যে, তবুও হারিয়ে যায় না সংবাদপত্রের কিছু অক্ষর, কিছু শব্দ। যুগ যুগ পরে আবারো ফিরে আসে নতুন করে, নতুন লেখকের হাত ধরে। দেশসেরা লেখকের কলমে শতবছর আগের সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন উঠে আসে উদ্ধৃতির চাঁদর গায়ে জড়িয়ে। সঙ্গতকারণেই স্থায়িত্বের মানদন্ডে সংবাদপত্রের অবস্থান অনেক শক্ত ও মজবুত। স্বীকার করতেই হবে।


অত্যন্ত দুর্বল অবয়বে গঠিত একটি সংবাদপত্রের ক্ষমতা কতো?


কথাটি সহজে বুঝবার জন্য কিছু বাস্তব চিত্র সামনে নিয়ে আসা যেতে পারে। আমাদের দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চিহ্নিত অপরাধীকে ধরার পর কখনো কখনো আবার ছেড়েও দেয়, লাল টেলিফোন’র চাপ থাকলে। মাঝেমধ্যে লেনদেনজনিত সন্তোষজনক পরিবেশও এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু মিডিয়া বা সংবাদপত্র কোনো অপরাধীর পিছু নিলে তাকে কবরে পোঁছার ব্যাবস্থা না করে পিছু ছাড়ে না। শায়খ রহমান ও বাংলা ভাই’র কথাতো আমরা এখনো ভুলে যাই নি! বাংলা ভাইকে ধরা হয়েছে আবার ছেড়ে দেয়াও হয়েছে। কিন্তু মিডিয়া যখন ধরেছে, প্রশাসন আর ছাড়তে পারে নি।


চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড শারমিন রিমা হত্যার ঘাতক মুনির বেঁচে যাওয়ার রাস্তা তো প্রায় বের করেই ফেলেছিলো। সম্ভব হয়নি মিডিয়ার কারণে। এরশাদ শিকদারের কথা কি মনে আছে?

‘‘আমি তো মরে যাবো চলে যাবো রেখে যাবো সবি- আছিস কি কেউ সঙ্গের সাথী সঙ্গে আমার যাবি, আমি মরেই যাবো...’’


গান বানিয়ে ছিলো সে। নিস্তার পায়নি। স্বর্ণকমল ছেড়ে তাকেও চলে যেতে হয়েছে । সঙ্গের সাথী দূরে থাক, প্রকাশ্যে পাশে দাঁড়ানোর মতোও কাউকেই পায়নি। কারণ পেছনে ছিলো মিডিয়া। আরো স্পেসিফিক করে বললে প্রিন্ট মিডিয়া বা সংবাদপত্র। তখনকার সময়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এতো তোড়-জোড় ছিলো না। আর এখন???



একবার তাহলে দূর থেক্র তাকানো যাক জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকা পাড়ায়। দেখে আসা যায় সেখানকার চিত্রটি কেমন?


নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষহীন ভালো পত্রিকা যেগুলো, (জানি না কোনগুলো, আছে নিশ্চই) সেগুলো নিয়ে কথা নেই। আমার বক্তব্য পাইকারিগুলো নিয়ে। রং মাখিয়ে ‘সঙ’ সাঝিয়ে বাজারজাতকৃত পত্রিকার কোনো অভাবই নেই দেশে। ব্যাঙ'র ছাতার সাথে তুমূল প্রতিযোগিতা করে যেভাবে নতুন নতুন পত্রিকা গজাচ্ছে, তাতে করে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ব্যুরো’র পক্ষেও সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।


যদিও সংবাদপত্রের আধিক্য আশাবাদি হবার মতেই ব্য্যাপার ছিলো, কিন্তু সততা ও বস্তুনিষ্টতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যবসাপ্রধান নীতি অবলম্বন করে সংবাদের পরিবর্তে
সঙবাদ প্রকাশে বেশি পারদর্শী অই পত্রিকাগুলো জাতির জন্য বরং খতরনাক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

ভুল তথ্য পাওয়ারচে’ তথ্য না পাওয়াইতো ভালো। ফারসি একটি কবিতাংশ হচ্ছে, কুউওয়াতে নেকি নাদারি বদ্ মকুন। এর মানে নেকি করতে না পারলে অন্তত গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা দরকার। সাংবাদিকতার নিয়ম-নীতি পায়ে দলে অসত্য বা অর্ধসত্য সংবাদ পরিবেশনকারী অনেকগুলো সংবাদপত্রেরচে’ সংবাদপত্র না থাকাইতো ভালো।


জন্ম ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, আমাদের সমাজে কিছু পূঁজিপতি আছেন, গরীবের ঘাম বিক্রি করে করে যারা প্রচুর টাকা-পয়সা বানিয়ে ফেলেছেন। পত্রিকা প্রকাশ করা আজকাল তাদের অন্যতম একটি শখে পরিণত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বড় কোনো ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান একটি পত্রিকা বের করলে প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রত্রিকা বের করার আগ পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রেস্টিজ ইস্যু প্রকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মেঘনা গ্রুপ (মনে করা যাক আর কি) কালান্তর নামে পত্রিকা বের করে ফেলেছ! অতএব, বুড়িগঙ্গা গ্রুপকে তো আর বসে থাকলে চলে না। আবার আসুন্ধরা গ্রুপও যে কারোচে’ কম না, সেটা প্রমাণ করারওতো একটা ব্যাপার আছে। অতএব, মোমের আলো, জমানার কণ্ঠ ...


এগুলোকে সংবাদ সেবা না বলে পত্রিকাবাণিজ্য বললে কি বাড়িয়ে বলা হবে? প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা এবং নিজেকে ডিফেন্স করার কাজেই যদি পত্রিকাগুলো বেশি সচল থাকে, তাহলে কী আর বলার থাকে!


অবস্থা আজ এমন -

হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ আছে, টাকাগুলো গিলে ফেলার নিয়ত করা হয়েছে, অতএব, হজম করার সুবিধার জন্য একটি পত্রিকা থাকলে সুবিধা। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা দরকার, নিজের ঝুড়িতে একটি পত্রিকা থাকলে অনেক সুবিধা। কাজটি আসান হয়ে যায়। ঠিক যেমনটি আমরা এই কিছুদিন আগেও হতে দেখলাম। দু’য়েকটি জাতীয় পত্রিকার আচরণে। এই যদি হয় অবস্থা, সংবাদপত্রের খাসলত যদি হয় ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করা বা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, অথবা এটা যদি হয় নিছক বাণিজ্য, তাহলে কী আর করা?

আমাদের সমাজে আরো কিছু ওজনদার লোক আছেন, মারাত্মক জ্ঞানী লোক। বুদ্ধির ফেরিওয়ালা। কেতাবি ভাষায় যাদের নাম বুদ্ধিজীবি। মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ি বুদ্ধি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা অর্থে তারা বুদ্ধিজীবি হলে বাংলাদেশে তাদের বেঁচা-বিক্রি কখনো মন্দ হয় না। তাদের স্টকে সিজনাল মাল থাকে প্রচুর । যখন যেটা দরকার, মার্কেটে সেটাই ছাড়েন। সিজন পরিবর্তন হলে পণ্যও পাল্টে ফেলেন। এই বুদ্ধিটি তাদের ভালোভাবেই আছে। স্বাধে কি আর তারা বুদ্ধিজীবি!


আমরা এমন অনেক বুদ্ধিজীবির কথা জানি, বঙ্গবন্ধুর সময়ে যারা গাছেরটা খেয়েছেন গোড়ারটাও ছাড়েন নি। প্রশংসা করতে করতে বঙ্গবন্ধুকে তখন অনেকটা ফেরেশতার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা তাদের মনোভাবেরও পরিবর্তন করে ফেলেছেন। তখন বঙ্গবন্ধুকে আর তাদের কাছে ফেরেশতাতো পরের কথা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য ইয়াহইয়া খানের সঙ্গে আপোষকামী একজন সাধারণ মানুষেরচে’ বেশি কিছু মনে হয় নি।


কিছু আছেন এমন, বঙ্গবন্ধুর কাছে যারা অন্যায় আবদার নিয়ে গিয়ে পাত্তা পাননি বা সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসুন্দর মন্তব্য করতেও ছাড়েন নি। আজকাল তাদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর নামের তসবীহ জপে জপে পেরেশান। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সকল মৃত মানুষকে সাক্ষী বানিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন বঙ্গবন্ধু তাকে কতো বেশি ভালো বাসতেন। দেশের প্রতি তাদের ভয়াবহ দরদের কারণে স্থায়ীভাবে বিদেশে পড়ে থাকেন।


আমরা এমন অনেক বুদ্ধিজীবির কথা জানি, একসময়, সময় ভালো ছিলো যখন, সকাল-সন্ধ্যা যারা কুর্ণিশ করতেন পল্লিবন্ধুর চৌকাটে। সেই পল্লিবন্ধু, যে নেককার লোকটি প্রতি বৃহস্পতি বার দিবাগত রাতে একটি বরকতি স্বপ্ন দেখতেন। এবং পরেরদিন দলবল নিয়ে যথারীতি হাজির হতেন স্বপ্নে দেখা সেই মসজিদে। গিয়ে বলতেন, আমি গতরাতে স্বপ্নে দেখেছি আপনাদের মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করছি... , সেই নেতাকেও আজকাল তার সময়ে সুবিধাভোগিরা গালি-গালাজ করেন। অন্যরা একবার স্বৈরাচার বললে তারা দশবার বলতে চেষ্টা করেন।


এই ক্যাটাগরির বুদ্ধিজীবিরা যখন বুদ্ধি বিক্রির জন্য ভালো কাস্টমার পান না, তখন তারা তাদের মালদার ব্যবসায়ী বন্ধু-বান্ধবকে মটিভেট করেন একটি পত্রিকা বের করার জন্য। এতে প্রধান দু’টি লাভের মধ্যে একটি লাভ হলো, স্বাস্থ্যবান ফিগারের বেতন-ভাতা ,বাড়ি-গাড়ি এবং এক্সট্রা অডিনারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। আর দ্বিতীয়টি হলো, মাথার ভেতরে কিলবিল করতে থাকা সৎ/অসৎ চিন্তাগুলো সমাজে ছড়িয়ে দেয়া যায়।


বিশেষ ব্যাক্তি, গোষ্টি বা দলের পদলেহন বা তল্পিবহন যদি হয়ে যায় একটি পত্রিকার মূলনীতি, পত্রিকাটি যদি তার জন্মদাতা ও অন্নদাতাদের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে থাকে, তাহলে সেই সংবাদপত্রের আর জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে ওঠার সুযোগ থাকে না।


ব্যাবসায়ি বুদ্ধিজীবিদের খপ্পরে পড়ে কিছু কিছু সংবাদপত্র আজ নিজস্ব ঐতিহ্য হরাতে হারাতে অস্তিত্বই হারাতে বসেছে। এর প্রধান কারণ হলো, বাংলাদেশে কোনো মিডিয়া নীতিমালা নেই। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে কেউই জবাবদিহিতার উর্দ্ধে নয়। অন্তত থাকা উচিৎ নয়। অথচ আমাদের দেশে সংবাদপত্রগুলোকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। যার ফলে সেচ্ছাচারের দরজা-জানালা খোলাই থাকে।


ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য পত্রিকার ব্যবহার উচিৎ নয়, আমাদের দেশে তাই হয়। ব্যক্তিগত জেদ বা আক্রোশ মেটানোর জন্য পত্রিকার ব্যবহার কাম্য নয়, আমাদের দেশে তা-ও হয়। যে কারণে বস্তুনিষ্টতা নামক ব্যাপারটিকে পত্রিকার পাতায় না খুঁজে যাদুঘরে গিয়ে তালাশ করা উচিৎ কি না, কিছু কিছু মানুষ আজকাল তাই ভাবতে শুরু করেছে।